শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
The Daily Post
কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৬২ টাকা নির্ধারণ

কুষ্টিয়ায় জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত চালের দামে প্রভাব পরেনি ভোক্তাদের মধ্যে 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ায় জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত চালের দামে প্রভাব পরেনি ভোক্তাদের মধ্যে 

কুষ্টিয়ার চালের বাজারে মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও এর প্রভাব এখনো পরেনি ভোক্তাদের মধ্যে। এখনো চড়া দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে। কুষ্টিয়ার মোকামে মিনিকেট চালের দাম কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৬২ টাকা হবে বলে নির্ধারণ করা হয়েছে। যা খুচরা বাজারে ৬৪ টাকায় বিক্রি করতে হবে। 

গত রোববার থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করার নির্দেশ দেয়া হয় স্থানীয় প্রশাসন থেকে।গত রোববার বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এদিন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে চালকল মালিক, আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

সভায় পুলিশ সুপার এ এইচ এম আবদুর রকিব, বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদসহ জেলার শীর্ষ মিলমালিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় চালকল মালিক ও ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ অভিযোগ করে বলেন, কুষ্টিয়ার চালকল মালিকেরা খেয়াল খুশিমতো চালের দাম বাড়ায় না। উত্তরবঙ্গের কিছু করপোরেট চাল ব্যবসায়ী চালের দাম বাড়ান। মিলাররা চালের দাম বাড়ান, এমন কথা শুধু মিলারদের শত্রুরা বলেন। তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, কোনো চালকল মালিক কেজিপ্রতি এক টাকাও লাভ করেন না।

এদিকে গত রোববার থেকে প্রশাসনের বেঁধে দেয়া মূল্যে চাল বিক্রির কথা থাকলেও বাজারে এখনো চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে। কুষ্টিয়ার বড়বারের চাল ব্যবসায়ী বিশ্বনাথ সাহার দোকানে মিনিকেট ৬৬ টাকা, সুপার মিনিকেট ৬৫ টাকা, বাসমতি ৭৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। 

অপর এক চাল ব্যবসায়ী বলেন, তিনি বাসমতি চাল বিক্রি করছেন, ৭১ টাকা করে তার কেনা আছে ৭২ টাকা করে। বাধন এন্টারপ্রাইজ মালিক বলেন, তাদের চাল বেশী দামে খরিদ করা আছে সরকারি মূল্যে বিক্রি করা হলে আমাদের লোকসান হবে। তিনি ৪৯ নতুন কাজল লতা ৫৩.২০ টাকায় মিল থেকে কিনে  ৫৫ টাকায় বিক্রি, পুরাতন কাজল লতা ৫৯ টাকায় কিনে ৬০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। 

বড় বাজারের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, গত রোববার থেকে বাজারে চালের মূল্য কম হবে এ আশায় সোমবার (২২ জানুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত চাল কেনার একটি খরিদ্দারও আসেনি। সকাল থেকে বড় বাজারে দুপুর পর্যন্ত এক বস্তা চাল কেউ বিক্রি করতে পারেনি। 

ব্যবসায়ীরা জানান, মিলমালিকদের কারসাজিতে বাজারে চালের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার বা স্থানীয় প্রশাসন যদি মিল মালিকদেরকে নজরদারীতে আনতে পারে তাহলে চালের দাম কিছুটা হলেও কমে আসবে। মিল মালিকরা ইচ্ছে মত চালের দাম বাড়িয়ে দেয়ায় বাজারে চালের দাম বেড়ে গেছে। 

বড় বাজারে চাল কিনতে আসা দিলিপ কুমার সাহা বলেন, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আমরা যা আয় করি তা দিয়ে আর চাল কিনে খাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিনই বাড়ছে চালের দাম। লালু নামের এক ডিম ব্যবসায়ী বলেন, আমাদেরতো আয় বেশী হয়না। যা আয় করি তা দিয়ে চাল কেনা সম্ভব হচ্ছে না। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি দরকার।

 জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ বাবুল হোসেন বলেন, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে কুষ্টিয়া জেলার চালকল মালিকেরা ভূমিকা রাখেন। তাদের কাছ থেকে ধান চাল মজুতের পাক্ষিক প্রতিবেদন পাওয়া যায় না। এমনকি গুদামের হালনাগাদ তথ্যও জানতে পারেন না।

চালকল মালিক জামশেদ আলী বলেন, বাজারের দিকে সরকারের নজর কম থাকায় নির্বাচনকালীন সময়ে সবধরনের চাল কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় টাকা বেড়ে গিয়েছিল। আর রাজনৈতিক অস্থিরতা, ঘন কুয়াশা ও মেঘলা আবহাওয়াকে চালের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন চালকলমালিক আবদুস সামাদ। দেশ অ্যাগ্রোর মালিক আবদুল খালেক বলেন, চালের দাম কমবে, তবে শর্ত আছে। সেটা হলো ধানের দাম কমতে হবে। আগের দাম ও বর্তমান দামে কেনা ধানের দাম গড় করা হয়। 

এরপর চালের দাম নির্ধারণ করা হয়। এ সভা থেকে কয়েকজন চালকল মালিক জেলা প্রশাসনকে হুমকীও দেয়। তারা বলেন, বেশী চাপাচাপি করলে চালের বাজার আরো নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাবে। 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সুচন্দন মণ্ডল বলেন, মিল মালিকেরা ভুল তথ্য দিচ্ছেন। তাদের দেয়া তথ্যের চেয়ে মিলগেটে দুই থেকে আড়াই টাকা বেশি দরে চাল বিক্রি করা হয়।

 জেলা প্রশাসক মিল মালিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, মিনিকেট চালের একটা দাম নির্ধারণ করে দেন। যেটা সোমবার (২২ জানুয়ারি) থেকে কার্যকর করবেন। সেই সিদ্ধান্তের বিষয় খাদ্য মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে।

মিল মালিক নেতারা কেজি প্রতি ৬৩ টাকা সর্বোচ্চ দরে বিক্রি করবেন বলে জানান। পরে ৬২-৬৩ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা চলে। একপর্যায়ে জেলা প্রশাসক ঘোষণা দেন, ৬২ টাকার বেশি কেউ মিলগেটে সরু চাল বিক্রি করতে পারবেন না। যা খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৬৪ টাকা দরে বিক্রি হবে। 

টিএইচ